ডিয়ানা গিন ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ল’য়ের সহযোগী অধ্যাপক। আইন এবং ধর্ম তার গবেষণার আগ্রহের বিষয়বস্তু। জুরিস্ট ডট অর্গ থেকে প্রবন্ধটি তরজমা করে যায়যায়দিনে ছাপিয়েছিলাম।
।
।
সতের ফেব্রুয়ারি-২০১২। কানাডার সুপ্রিমকোর্ট এই দিন এসএল বনাম কমিশন স্কলারি ডেস চেনেস মামলায় ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। মামলাটির ইস্যু ছিল, স্কুল শিশুদের জন্য চালু করা নৈতিকতা এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি (এথিকস অ্যান্ড রিলিজিয়াস কালচার বা ইআরসি) নামের বাধ্যতামূলক কর্মসূচি নিয়ে আপত্তি জানানো বাবা-মায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে খর্ব করে কি না। মামলাটিতে আপিলকারী বাবা-মা তাদের সন্তানকে এই কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে বলেছিলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ তা করেনি। আদালত মামলার সমাপ্তি টেনেছেন এই বলে যে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এই কাজ শিশুটির বাবা-মায়ের অধিকারকে লঙ্ঘন করেনি।
নয় সদস্যের ফুল কোর্ট শিশুটির বাবা-মায়ের যুক্তিকে বাতিল করে দিয়েছেন। তবে দু’জন বিচারপতি ইআরসি কর্মসূচিতে শিক্ষা দেয়া বিষয়গুলোর ব্যাপারে তথ্য নিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে হয়ত কোনো বাবা-মা এটাকে লঙ্ঘন হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন।
ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন হয়নি মর্মে যেভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সে কারণে এবং বহু-সাংস্কৃতিক প্রকৃতির কানাডার ধর্মীয় স্বাধীনতার সুযোগকে নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে মামলাটির আদেশ বেশ গুরুত্ব বহন করে।
ইআরসি কর্মসূচি কুইবেকের স্কুলগুলোতে চালু হয় ২০০৮ সালে; উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট থেকে ধর্ম অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়া। এই মামলাটিতে বাবা-মা আপত্তি জানায় যে, শিশুকে ধর্মের ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব; স্কুলের নয়। বাবা-মা আরো যুক্তি দেয় যে, তাদের শিশুকে নৈতিক তুলনাবাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে সব ধর্ম এবং দর্শন হচ্ছে সমান মূল্য বিশিষ্ট- এই শিক্ষার মাধ্যমে তাদের নিজ ধর্মীয় নির্দেশনার লঙ্ঘন হয়েছে।
কানাডায় ধর্মীয় স্বাধীনতা হচ্ছে চার্টার অফ রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস দ্বারা সুরক্ষিত অধিকার এবং স্বাধীনতাগুলোর একটি। যদি এটা প্রমাণিত হয় যে এই চার্টারের কোনো অধিকার রাষ্ট্রের কোনো কাজের দ্বারা লঙ্ঘিত হয়েছে, তখন সরকার দেখাতে চেষ্টা করে যে, ‘আইন আরোপিত যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যেই’ এটা রয়েছে এবং সেটাকে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দরকারি বলে জায়েজ করার চেষ্টা চালায়। এই মামলায় ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হয়নি বলে আদালত ব্যাখ্যা দেয়ার কারণে এটাকে আর দ্বিতীয় উপায়ে জায়েজ করার জন্য বিবেচনার দরকার হয়নি।
এসএল মামলায় আদালত এটা গ্রহণ করেছেন যে, আবেদনকারী বাবা-মা তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে নিরব থেকেছেন, কিন্তু একথাও তারা দেখাননি যে তাদের শিশু ইআরসি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কারণে তাদের ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত এসেছে। ট্রায়াল বিচারক এই কর্মসূচিকে বলেছেন ‘বিভিন্ন ধর্মে যোগদানের জোড়জবরদস্তি ছাড়াই শিশুদের সামনে ধর্মগুলোর একটি অসাধারণ উপস্থাপন।’ এই মতের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের বেশিরভাগ বিচারপতি। এটাকে অন্যভাবে দেখলে সেটা ‘কানাডিয়ান সমাজের বহু-সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে কুইবেক সরকারের বাধ্যবাধকতাকে তুচ্ছ করা হতো।
আদালত গুরুত্ব দিয়েছেন কানাডিয়ান সমাজের বহু-সাংস্কৃতিক প্রকৃতির ওপর। শিক্ষার জন্য গৃহীত একটা সরকারের উদ্যোগের ফলে কোনো একটা ধর্মের উপরে আরেকটা ধর্ম বা ধর্মের উপরে ধর্মহীনতা অথবা ধর্মহীনতার ওপর ধর্ম প্রাধান্য পেতেই পারে। যাইহোক, এরএল মামলায় বাবা-মা এটা দাবি করেননি যে তাদের সন্তানকে একমাত্র বিশ্বাস হিসেবে ক্যাথলিসিজম শিক্ষা দেয়া হোক; বরং তারা দাবি করেছেন যেন তাদের শিশুকে কর্মসূচির অন্যান্য শিক্ষা থেকে বিরত রাখা হয়। একটা কর্মসূচি থেকে বিরত রাখা কিভাবে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতাকে নিশ্চিত করে সেটি নিশ্চিত হওয়া আসলে খুব কঠিন।
পুরো মামলার সিদ্ধান্তে আদালত শক্তভাবে বহু-সাংস্কৃতিবাদ ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। যেটা চার্টারের ২৯ নং ধারার সঙ্গেও সামঞ্জস্যশীল। আর সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আদালতের কাছে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় যুক্তি-বহু বছর ধরে চলে আসে কানাডিয়ান সমাজের বহু-সাংস্কৃতিক বাস্তবতা।