মিস্টার রয়ে’র আসল নাম কি?

ফুকেটে টিকেট কাটতে গিয়ে পরিচয় হলো এক লোকের সাথে, নাম বললো ‘‌ম্যাক্স’। আরেক মহিলার সাথে আলাপ হলো তার নাম বললো ‌‘মার’। এই মহিলার সাথে আরো আলাপে বের হয়ে আসলো যে, সে মুসলিম। তখন তার কাছে জানতে চাইলাম, ‌‘মার’ আবার কেমন নাম? পরে বললো তার নাম আসলে ‘হালিমা’।

ফি ফি আইল্যান্ডে গিয়া ঘোরাঘুরির জন্য বিলাসবহুল জাহাজ বাদ দিয়া অল্প পয়সায় ট্রলার ভাড়া করলাম। যে মহিলার কাছে বুকিং দিলাম, সে আমাদের জানালো আমাদের ট্রলারের ড্রাইভার কাম ট্যুর গাইডের নাম ‘মিস্টার রয়’। ফোন নাম্বার দিয়ে দিলো, পরের দিন সময়মতো ঘাটে থাকতে বললো।

আমরা পরের দিন সকলবেলা সময়মতো ঘাটে গিয়ে মিস্টার রয়কে পেলাম। মিস্টার রয় আমাদের নিয়ে ফি ফি লি’র চতুর্দিক ঘুরে আসবে। আমারা ট্রলারে যাত্রা শুরু করলাম। বড় বড় ঢেউয়ের তালে তালে আমাদের ট্রলার দোল খেতে লাগলো। কখনো মনে হতে লাগলো আমরা মনে হয় ঢেউয়ের নিচে চাপা পড়বো। মিস্টার রয় দারুন দক্ষতায় আমাদের নিয়ে দ্বীপের চাশপাশে ঘুরে ঘুরে এগোতে থাকলো। আমরা মায়া দ্বীপে ছবি তোলার জন্য থামলাম।

এরপর আমরা আরো পশ্চিম ঘুরে লোহ সামাহ বে’তে থামলাম। এরপরে ঘুরে ঘুরে গিয়ে থামলাম পিলেহ লাগুন-এ। এর মধ্যে কেটে গেছে কয়েক ঘন্টা। মিস্টার রয়ের সাথে আনেক আলাপ হতে থাকলো। একথা, সেকথা, তাদের সংগ্রামী জীবন-জীবিকা, আরো কতো শতো সুখ-দুঃখের আলাপ। ঘনিষ্টতাও হলো।

পিলেহ লাগুনে ট্রলার ভিড়িয়ে আমাদের নেমে আনন্দ করতে বললো মিস্টার রয়। বললো যতক্ষণ ইচ্ছা হয় ডুবাও, আমি ট্রলারের ইঞ্জিনটা একটু ঘষামাজা করি। আমরা স্বচ্ছ নীলাভ নোনা পানিতে লাফালাফি-দাপাদাপি করতে থাকলাম। আধাঘন্টার বেশি সময় পরে ক্লান্ত হয়ে যখন ট্রলারের কাছে ফেরত আসলাম, তখনো মিস্টার রয় পাঙ্খায় কাজ করতেছে। আমাদের দেখে ট্রলারে উঠলো; লাফিয়ে উঠার সময় জোড়ে বললো, ‘বিসমিল্লাহ’।

আমরাতো অবাক! কিরে ভাই, তুই বিসমিল্লাহ কইলি ক্যান? তোর নামতো ‘রয়’, তুইতো মুসলমান না। নাকি আমরা মুসলমান দেইখা আমাগো লগে আরো খাতির করার জন্য কইতেছো?

মিস্টার রয় বলে, সে মুসলমান। আমরা বললাম কেমনে কি? তাইলে ভাই তোমার নাম ‘রয়’ হইলো কেমনে? মিস্টার রয় এইবার আসল কথা বলা শুরু করলো। জানালো তার নাম আসলে জিব্রাইল।

কি সর্বনাশ! জিব্রাইল ফেরেশতার নামে তোমার নাম, অথচ তুমি নিজেরে মিস্টার রয় বলে পরিচয় দিচ্ছো, ঘটনা কি?

এরপর জিব্রাইল আমাদের যে ব্যাখ্যা দিলো, তা দিয়ে আমরা একটা মালা গাঁথলাম। সেই মালার একটা ফুল ‘রয়’ ওরফে জিব্রাইল, আরেকটা ফুল ‘মার’ ওরফে হালিমা, আরেকটা ফুল ‘ম্যাক্স’ ওরফে নাম জানা কঠিন কোন নাম।   

ফি ফি লি

থাইল্যান্ড খুবই ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি দেশ। অবিশ্বাস্য রকমের ফ্যাসিলিটি ট্রাভেলারদের জন্য। এতো চমৎকার ব্যবস্থাপনা, ট্রাভেলারদের নূন্যতম কষ্ট বা ঝামেলা হওয়ার চান্স নেই বললেই চলে। জিব্রাইল বা হালিমাদের নামকে সহজীকরণ করে আগত সকল মানুষের মুখে উচ্চারণের সুবিধা দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। আহা।

থাইলান্ডের টুরিস্ট-ডেস্টিনেশনের সকল এলাকায়ই ট্রাভেলারদের জন্য সুবিধাজনক এমন নানান ব্যবস্থা রয়েছে। আর সেই ব্যবস্থার অংশ হয়ে শামিল হয়ে আছে স্থানীয় লোকজনও।   

Leave a Reply