২২ শে আষাঢ়

২২ শে আষাঢ়

আমার জন্ম হয়েছিল ২২ আষাঢ় ফজরের ওয়াক্তে। বাবা-মায়ের ৮ জন কন্যা সন্তানের পর আমার জন্ম—পরিবারের সবাই কেমন খুশি হয়েছিল তা আমি ভেবে শেষ করতে পারি না। ঘরের পিছনের বারান্দায় মা যখন সারারাত আতুর ঘরে, সামনের বারান্দায় চালু ছিল দাদার দরবার। সবাই নির্ঘুম, টেনশন, এবাদত-বন্দেগীতে ব্যস্ত। ছেলের জন্ম হয়েছে দেখে শুকরিয়া-খুশি-আনন্দে কার চোখে কতটা পানি এসেছিলো তা আমার জানা নাই। খুবই অসুস্থ থাকা জোহরা ফুফু শরীরে অদ্ভুত শক্তি জোগাড় করে আমারে নিয়া দাদার কোলে তুলে দিলে বললেন, ‘বাবা, নেবাইরে আল্লাহ সোনার চাঁন দিছে’। দাদা আমার নাম রাখলেন জহিরুল ইসলাম।

২২ শে আষাঢ়
আমি গর্ভে থাকাবস্থায় মা স্বপ্নে দেখলেন শুভ্র সাদা পোশাক-দাড়ির নুরানী চেহারার এক ব্যক্তির সাথে তার দেখা হলো। মা তাকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে মায়ের হাতে একটা শামুক তুলে দিয়ে চলে গেলেন। শামুক হাতে নিয়ে মা আলগা ঢাকনাটা সড়িয়ে দেখলেন ভেতরে সোনার হার। কেউ একজন মায়ের কাছে এসে বললেন, ‌‘তুমি তারে চিনো না, তিনিতো মুসা নবী’। গর্ভাবস্থায় মা এই স্বপ্নের কথা কাউকে বলেন নাই, কিন্তু মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন ছেলে হলে নাম রাখবেন ‘মুসা’।
বিদ্যালয়ের কেরানীর কল্যাণে বাংলাদেশের লাখো-কোটি মানুষের মত আমার জন্ম তারিখও সার্টিফিকেট অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে। কেতাবী নামে ‘মুসা’ তারা অন্তর্ভুক্ত করেন নাই। এই কষ্ট আমি ভুলতে পারি না।
কাছের লোকজন আমাকে মুসা ডাকে। আমার হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যায়। আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধবধবে সাদা লম্বা পাঞ্জাবি পরিহিত মুসা নবী আমার মায়ের হাতে শামুক তুলে দিচ্ছেন। মা শামুকের ঢাকনা সড়াচ্ছেন আর ‘মুসা’ ‘মুসা’ নামের শব্দের ঝংকারে চারপাশটা ভরে যাচ্ছে।

Leave a Reply