লকডাউনে দেখা সিনেমার বাছাইকরা রিভিউ

লকডাউনে দেখা সিনেমার বাছাইকরা রিভিউ

আইএমডিবির টপ ২৫০ মুভির লিস্ট থেকে ২০০ বেশি মুভি দেখা হয়েছে। এছাড়াও সারা জীবনে দেখা মুভির মোট সংখ্যা কত হাজার তার হিসাব নাই। ওকালতি শুরু করার পর বেশি সময় পাই না। তাই খুব ভাল রিকমেন্ডেশন না পাইলে দেখি না। লকডাউনের এই সময়টায় দেখা অনেক সিনেমার মধ্যে অল্প কিছু সিনেমা নিয়ে লিখে রাখলাম যাতে পরে মনে থাকে।
লকডাউনে দেখা সিনেমার বাছাইকরা রিভিউ
কুমবালাংগি নাইটস (Kumbalangi Nights) 2019
পুরো ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভাল মুভি বানায় মালায়লাম ইন্ডাস্টি। গল্প, মেকিং, অভিনয়, লোকেশন, সিনেমাটোগ্রাফি, ডিরেকশন—সব অসাধারণ। মালায়লাম মুভিটার মূল থিম ‘সম্পর্ক’। জীবনের নানান জটিলতা, অব্যক্ত বেদনা, ভালবাসা, স্নেহ পুরো মুভির পর্দাজুড়ে জ্বলজ্বল করে। অবিবাহিত চার ভাইয়ের গল্প। সিনেমাটোগ্রাফি দুর্দান্ত। প্রতিটা শট একেকটা আলাদা গল্প। খুব গোছানো। হাইলি রেকমেন্ডেড।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.৬/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫
বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস (Beyond the Clouds) 2017
ইন্ডিয়ান সিনেমা। পরিচালনা করেছেন বিশ্বখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্রকার মজিদ মাজিদি। দুই ভাই-বোনের গল্প। অনিশ্চয়তা, অভাব, কষ্ট, ভালোবাসাহীন, তাচ্ছিল্যে ভরা জীবন তাদের। সেই জীবন আরো এলোমেলো হয়ে যায়। ড্রাগ ডিস্টিবিউটর ভাই পুলিশের তাড়া খেয়ে ফেরারি হয়, বোন হত্যা প্রচেষ্টার আসামী হয়ে কারাগারে যায়। সর্বশক্তি দিয়ে ভাই বাঁচানোর চেষ্টা করে বোনকে। বোনের রেপিস্ট, যাকে হত্যা চেষ্টার মামলায় বোন জেলখানায়, তাকেই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় হাসপাতালে সেবা করে যায় ভাই। এর মধ্যে দক্ষিণ ভারত থেকে হাসপাতালে আসে রোগীর দুই মেয়ে শিশুসহ বৃদ্ধ মা। ঘটনাচক্রে তারাও জুটে যায় ভাইয়ের কাঁধে। ওদিকে জেলখানায় বন্দী বোন মায়ায় পরে এক ছোট্ট শিশুর, যার মা সাজাপ্রাপ্ত, অসুস্থতায় মারা যায় কয়েকদিন পর। ভাই-বোনের জীবনের এত এত আঘাত-লাঞ্ছলার পরও অন্য মানুষের জন্য মায়া কমে না তাদের। নিজেদের নিঃশেষ করে দিয়েও তারা ভালবাসার জাল বিছিয়ে যায়।
হয়তো দেশটি ইন্ডিয়া বলে সিনেমাটা ভাল ব্যবসা করে নি। এত চমৎকার করে গল্প বলা সিনেমা খুব একটা হয় না। হাইলি রেকমেন্ডেড।
আইএমডিবি রেটিং: ৬.৯/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৮/৫
রাতসাসান (Ratsasan) 2018
তামিল মুভি। সাইকোলজিক্যাল-ক্রাইম-থ্রিলার। সিরিয়াল কিলারদের গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা অরুন সারা পৃথিবীর আলোচিত সিরিয়াল কিলারদের ক্রাইম প্যাটার্ন নিয়ে গবেষণায় অবসেসড হয়ে থাকে। কিন্তু অরুনের গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর রিস্ক নিতে চায় না কোনো প্রযোজক। পরিবারের চাপে শেষমেষ হতাশ অরুন পুলিশে যোগ দেয়। দায়িত্ব পরে এমন এক টিমের সাথে কাজ করার যারা এক দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলারকে খুঁজছে, যে কিনা শুধুমাত্র স্কুলে পড়ুয়া মেয়ে শিশুদের হত্যা করে একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন ফলো করে। পুরো মুভিতে টানটান উত্তেজনা, প্রতিটি শট দরকারি। চমৎকার সব মিলিয়ে।
মূল চরিত্রে অভিনয় করা ভিনু ভিশাল ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। তামিলনাড়ু লীগে খেলার সময় ইঞ্জুরিতে পরে দীর্ঘদিন বিছানাবন্দী ছিলেন। তখন শুধু মুভি দেখতেন। সেখান থেকেই অভিনয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.৭/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৬/৫
মাই কাজিন ভিনি (My Cousin Vinny) 1992
অ্যালাবামা রাজ্যের এক ছোট্ট শহরে খুনের দায়ে আভিযুক্ত হয় নিউ ইয়র্কের দুই টিনএজার বন্ধু। তাদের ডিফেন্সে আইনজীবী ভাড়া করার টাকা নাই। একজন মাকে ফোন দেওয়ার পর জানতে পারে তাদের ফ্যামিলিতেই রয়েছে আইনজীবী—কাজিন ভিনি। ভিনি তার বান্ধবীকে নিয়ে চলে আসে ডিফেন্স করতে। কিন্তু ল’ স্কুল শেষ করার পর বার কাউন্সিলের আইনজীবী সনদ নিতে যে ভিনির লেগেছে ছয় বছর, আইনজীবী হিসাবে যে কাজ করেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ, পারসোনাল ইনজুরি ক্লেইম ছাড়া অন্য কোন মামলার সামান্য অভিজ্ঞতা নেই যার, সেই ভিনি কি হত্যা মামলার আসামীদের বাঁচাতে পারবে? কোর্ট প্রসিডিউরও আসলে জানে না ভিনি, উল্টা-পাল্টা পোষাক আর কথা-বার্তার জন্য আদালত অবমাননার দায়ে জেল-জরিমানাও গুনতে হয় ট্রায়াল শুরুর পর।
কমেডি মুভি। কোর্টরুম থ্রিলার। পুরোটাই বিনোদনে ভরপুর। খুবই ভাল লেগেছে।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.৭/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৬/৫
আনজাম পাথিরা (Anjaam Pathiraa) 2020
আরেকটি মালায়লাম সিনেমা। সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম থ্রিলার। একই প্যাটার্নে খুন হতে থাকে পুলিশের বেশ কয়েকজন অফিসার। সিরিয়াল কিলার চিন্তা, দর্শন, টেকনোটজি সব কিছুতে মারাত্নক এডভান্স। কোন প্রুফ রেখে যায় না, শুধু ইংগিত রেখে যায়। পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করে সাইকোলজিস্ট আনোয়ার হুসাইন। কেউ কোন কুলকিনারা করতে পারে না।
টানটান উত্তেজনার ছবি। যারা এর আগে মালায়লাম ক্রাইম থ্রিলার জনরার কিছু মুভি দেখেছেন তারা জানেন তাদের লেভেল। দৃশ্যাম, সেভনথ ডে, মুম্বাই পুলিশসহ সুপারস্টার মোহলনাল ও পৃথ্বিরাজ সুকুমারানের কিছু দুর্দান্ত থ্রিলার আছে। সেইসব লিস্টে সর্বশেষ সংযোজন। অনেক ভালো লেগেছে। ২ ঘন্টা ২৪ মিনিটের সিনেমায় সময় টের পাবেন না।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৫/৫
ফাইন্ড মি গিল্টি (Find Me Guilty, ২০০৬)
আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা ট্রায়ালের সত্যি গল্প অবলম্বনে তৈরি সিনেমা। ইতালিয়ান বংশোদ্ধুত অনেকজন গ্যাংস্টারদের বিরুদ্ধে ৮০টির বেশি চার্জ আনা হয়। বাঘা বাঘা সব আইনজীবী নিয়োগ পান অভিযুক্তদের পক্ষে। কিন্তু অভিযুক্ত গ্যাংস্টার জ্যাকি ডিনরশিয়ো কোনো উকিল নিযুক্ত না করে নিজেই নিজেকে ডিফেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। এই চরিত্রে অভিনয় করেন ভ্যান ডিজেল। একজন আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করেন পিটার ডিঙ্কলেজ, যিনি পরে গেম অফ থ্রোন্স সিরিজে টিরিয়ন ল্যানিস্টার চরিত্রে অভিনয় করে জগৎজোড়া খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
কোর্ট রুম ড্রামা। আইনের শিক্ষার্থী বলেই বেশি আগ্রহ ভরে সিনেমাটা দেখেছি। ভাল লেগেছে।
আইএমডিবি রেটিং: ৭/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৩.৮/৫
ধনঞ্জয় (Dhananjay) 2017
১৯৯০ সালে কলকাতায় নিজের ফ্লাটে খুন হয় কিশোরী হেতাল পারেখ। খুন ও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয় বিল্ডিংয়ের গার্ড ধনঞ্জয় চ্যাটার্জিকে। পুলিশি তদন্তে দোষী হয় ধনঞ্জয়। ট্রায়াল কোর্টে ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কোন ডিরেক্ট এভিডেন্স প্রমাণিত হয় নাই। শুধুমাত্র সার্কামাস্টান্সিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। পরে কলকাতা হাইকোর্ট ও ইন্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্টেও তার মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল থাকে। মামলার পিছনে নানান রাজনৈতিক চাপ, ভোটের হিসাব-নিকাষ ছিলো। ২০০৪ সালে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপর এই মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বই লিখেন প্রবাল চৌধুরী, দেবশিস সেনগুপ্ত এবং পরমেশ গোস্বামী। ‘আদালত-মিডিয়া-সমাজ এবং ধনঞ্জয়ের ফাঁসি’ নামের বইটির ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মিত।
কলকাতার বাংলা সিনেমাটিতে মিমি চক্রবর্তী লিড রোলে আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় দেখানো হয় আলোচিত এই মামলাটির রি-ট্রায়াল হচ্ছে। অভিনয়-নির্মাণ ভাল মানের না হলেও শুধুমাত্র কাহিনী ও গল্পের জন্য হলেও সিনেমাটা দেখা উচিত। বিশেষত আইনের লোকজনের। এভিডেন্স ল’, ট্রায়াল নিয়া আগ্রহীদের মিস করা উচিত হবে না।
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৯/১০ (মাত্র ৭১৩ জনের দেওয়া রেটিং)
ব্যক্তিগত রেটিং: ২.৮/৫

ফেসবুকে লিখেছিলাম, অনেক আলোচনা-মন্তব্য আছে।

Leave a Reply