২০১১ সালে যায়যায়দিনে ছাপা হয়েছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৮০ (১) অনুচ্ছেদ বলছে, ‘আইন প্রণয়নের উদ্দেশে সংসদে আনীত প্রত্যেকটি প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপিত হইবে।’ এ বিল আবার দুধরনের হয়; সরকারি বিল- যেটা সংসদে উত্থাপন করেন মন্ত্রী আর বেসরকারি বিল- যেটা উত্থাপন করেন মন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো সংসদ সদস্য।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংসদ গঠিত হয়েছে নয়টি। এখনো পর্যন্ত যত বিল আইন আকারে পাস হয়েছে তার প্রায় সবই সরকারি বিল। বেসরকারি বিল পাসের সংখ্যা দেখলেই বিষয়টি পুরো স্পষ্ট হয়। নয়টি জাতীয় সংসদে এ পর্যন্ত বেসরকারি বিল পাস হয়েছে মাত্র সাতটি। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একজন সংসদ সদস্যের মূল কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা। পরিসংখ্যানে যেটা দেখা যাচ্ছে তাতে এ কথা বুঝতেও কষ্ট হয় না যে, বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়নের একদিকে অর্থাৎ সরকারি বিল পাসেই বেশি মনোযোগী।
প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদে কোনো বেসরকারি বিল উত্থাপিত হয়নি। দ্বিতীয় সংসদে উত্থাপিত ৪৮টি বেসরকারি বিলের মধ্যে ফজিলাতুন্নেছা প্রস্তাবিত ‘বিবাহে যৌতুক নিষিদ্ধকরণ বিল-১৯৮০’ ও আছহাবুর রহমান প্রস্তাবিত ‘খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-১৯৮০’ পাস হয়। তৃতীয় সংসদে উত্থাপিত পাঁচটি বেসরকারি বিলের মধ্যে পাস হয় একটি- ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল-১৯৮৭’, যার প্রস্তাবক ছিলেন ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী।
চতুর্থ সংসদে বেসরকারি বিল উত্থাপিত হয় ছয়টি, যার মধ্যে একটিও পাস হয়নি।
পঞ্চম জাতীয় সংসদে সবচেয়ে বেশি বেসরকারি বিল প্রস্তাব করা হয়। সংখ্যার হিসাবে ৭৪টি। এর মধ্যে পাস হয় মাত্র একটি। বিলটি ছিল ফরিদা রহমান প্রস্তাবিত ‘সংসদ সদস্যদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বিল-১৯৯৩’। সপ্তম সংসদে উত্থাপিত ৫১টি বিলের মধ্যে পাস হয় একটি । ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন বিল-২০০১’ নামের এ বিলটি উত্থাপন করেছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজী।
অষ্টম সংসদে উত্থাপন করা হয় ৫৪টি বেসরকারি বিল। একটিমাত্র পাস হয়। ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন (রহিতকরণ) বিল-২০০২’ উত্থাপন করেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য শামসুল আলম প্রামাণিক।
স্বাধীনতার পর থেকে গত আটটি সংসদে উত্থাপিত হয় মোট ২৫৫টি বেসরকারি বিল। যার মধ্যে পাস হয়েছে মাত্র ছয়টি বিল। আর চলতি নবম জাতীয় সংসদে এ পর্যন্ত উত্থাপিত হয়েছে ১২টি বেসরকারি বিল। পাস হয়েছে মাত্র একটি। অর্থাৎ নয়টি জাতীয় সংসদে এ পর্যন্ত বেসরকারি বিল পাস হয়েছে মাত্র সাতটি। শত বছরের পুরনো কুষ্ঠ রোগীদের জনবিচ্ছিন্ন করার কুসংস্কার ও অমানবিক আইনের বিলুপ্তি ঘটাতে ২৮ নভেম্বর নবম সংসদে ‘দ্য লেপারস (রিপিল) অ্যাক্ট, ২০১১’ বিলটি আইন আকারে পাস হয়েছে।
বেসরকারি বিল হিসেবে গত বছরের ৩ জুন সংসদে কুষ্ঠ রোগীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের প্রস্তাব রেখে বিলটি উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। বিলের উপর ৫টি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন ফজলুল আজিম। শিরোনামের উপর দেয়া সংশোধনীটি গ্রহণ করা হয়। কুষ্ঠ রোগ সংক্রান্ত দি লেপারস অ্যাক্ট নামের আইনটি ১৮৯৮ সালের সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী প্রণীত হলেও পরে তা বিলুপ্ত হয়নি।
আইনটি প্রণয়নের সময় কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে শাসক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল এটি একটি সংক্রামক এবং অনিরাময়যোগ্য রোগ। এমনকি এ রোগটিকে অভিশাপ হিসেবেও অভিহিত করা হতো। ফলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইনের মাধ্যমে একঘরে করে রাখা হতো। সামাজিকভাবে নানা বৈষম্যেরও শিকার হতো তারা।
এ বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ রোগটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক এবং নিরাময়যোগ্য নয় মনে করে রোগীকে জনবিচ্ছিন্ন করা হতো। ফলে আক্রান্ত রোগীকে অসহনীয় পরিস্থিতিতে দিন যাপন করতে হতো। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের ফলে মানুষের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। মানসিক পীড়নের শিকার হচ্ছে অসংখ্য অসহায় মানুষ। অথচ বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত যে এ রোগটি মোটেও সংক্রামক নয়। অন্য রোগের মতো এটিও একটি নিরাময়যোগ্য রোগ।
নবম সংসদে উত্থাপিত ১২টি বেসরকারি বিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) বিল, ২০০৯।’ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন ঠেকাতে ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। আড়াই বছরেও বিলটি পাস হয়নি।