রম্য রচনা: প্রথম আলোর বদলে যাওয়ার অনুরোধে একজন করিম মিয়ার আপত্তি

২০০৯ সালে প্রথম আলো ‘বদলে যাও বদলে দাও’ শ্লোগান চালু করে। সেইটারে ব্যঙ্গ কইরা লিখিছিলাম। কোন একটা ব্লগে ছাপা হইছিল।

করিম মিয়া এলাকার সহজ সরল মানুষ। দেশ বিদেশের খোজ রাখেন নিয়মিত। তাইতো দেশে বা দেশের বাইরে কোথায় কি ঘটছে না ঘটছে, কোনটা নিয়ে বিতর্ক, কোনটা নিয়ে আপত্তি, কোনটা নিয়ে লুকোচুরি— সববিষয়েই মোটামুটি খবর থাকে তার কাছে। এগুলো নিয়ে আলোচনাও করেন তিনি। এলাকায় তার সাহস এবং সত্যবাদিতার সুনামও আছে। একই এলাকার সুশিক্ষিত এবং পরিপাটি রহমান সাহেবের সাথে তার দহরম মহরম সম্পর্ক। রহমান সাহেব নিজেকে এলাকার সুশীল সমাজের নেতা দাবী করেন। করিম মিয়া এমন এক মহান নেতার সাহচর্যে গর্ববোধ করেন। অবশ্য রহমান সাহেব গর্ববোধ করেন আরেকটা কারণে। সেটা হলো, তিনি এসময়ের সেরা সুশীল পত্রিকা প্রথম আলো পড়েন এবং এবিষয়ে বেশ ভাল জ্ঞান রাখেন।

করিম মিয়া প্রায়ই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনার জন্য রহমান সাহেবের কাছে আসেন। রহমান সাহেব এ ব্যাপারে আবার বেশ আন্তরিক লোক। আজ আলোচনার শুরুতেই করিম মিয়া সহজ সরল ভাষায় রহমান সাহেবকে প্রশ্ন করে বসলেন, আচ্ছা রহমান সাহেব, ‌‌’পিলখানা ট্রাজেডির কি তদন্ত-বিচার সব শেষ?’

করিম মিয়ার এমন প্রশ্নে রহমান সাহেব যারপরনাই্ অবাক হলেন। রহমান সাহেব ভালকরেই জানেন করিম মিয়া নিয়মিত পত্রিকা পড়েন। তারপরও কেন এমন বোকার মত প্রশ্ন করল সেটি বুঝার জন্যই পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তুমি কি পত্রিকা পড়া বাদ দিয়া দিছ নাকি মিয়া?

করিম মিয়া বলল, না। পত্রিকা পইড়াইতো এমন কথা মনে হইছে।

এবার রহমান সাহেব রেগে গিয়ে বললেন, তোমার বুদ্ধি-সুদ্ধি সব গেছে। আমার সামনে এমন কথা তুমি কইলা কেমনে মিয়া?

সহজ সরল করিম মিয়া কারণ দর্শানো শুরু করল। গত কয়দিনের প্রথম আলো পত্রিকা পইড়াই তার এমন বিশ্বাস জন্মাইছে। যা কিছু ভাল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর, তার  সঙ্গেই প্রথম আলো, এমন শিক্ষাতো রহমান সাহেবের কাছ থেকেই পাইছে সে। কিন্তু গত কয়েকদিনের  প্রথম আলো যেহেতু খুব গুরুত্বের সাথে পিলখানার হত্যাযজ্ঞের ঘটনাকে এড়াইয়া চলতাছে, এবং তারচেয়েও সময়োপযোগী ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করিয়া কয়েক বছর আগের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্তে কি ঘটল, কোন এলাকার মানুষ পানি পাইতাছে  না অথবা পাট শিল্পের ই হইল, এইসব বিষয়ের খবর প্রকাশ করতাছে, তাই তার এমন বিশ্বাস জন্মাইছে। আর প্রথম আলোর খবর অস্বীকার করাতো মারাত্নক আহম্মকি; তাই না?

রহমান সাহেব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সুশীল কথা-বার্তা শুরু করলেন। প্রথম আলো জন্মের পর থেকে কিভাবে দেশ ও জাতির মহা খেদমতে লিপ্ত রয়েছে তার অতি সামান্য কিছু বর্ণনা দেওয়া শুরু করলেন। করিম মিয়াকে বললেন শোন, দেশের পত্রিকা জগতে যখন দলীয় পক্ষপাতিত্বের গোলামী চলতাছিল, তখনই প্রথম আলো এক নিরপেতার বিপ্লব ঘটাইছিল।

 করিম মিয়া আমতা আমতা করে বলল, কিন্তু সেই কথিত নিরপেক্ষতাইতো এখন চরম স্বার্থবাদিতায় রূপ নিছে।

 রহমান সাহেবের রাগ বেড়ে যাচ্ছে। ধমকের স্বরে করিম মিয়াকে বললেন, তুমি জাননা মিয়া প্রথম আলো একটা জাতীয় সম্পদ?

 করিম মিয়া প্রতিবাদ করল। বলল, জাতীয় না, প্রথম আলো আন্তর্জাতিক সম্পদ। কারণ এদেশে আন্তর্জাতিক মহলের স্বার্থ রক্ষাই তার জাতীয় দায়িত্ব। আর………

 আরো কি বলতে চেয়েছিল করিম মিয়া কিন্তু রহমান সাহেব থামিয়ে দিয়ে বললেন, এদেশের সমাজ উন্নয়নে কি প্রথম আলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নাই?

করিম মিয়া বলল, অবশ্যই। এদেশের আনস্মার্ট সমাজকে প্রথম আলোই তো সুশীলতায় রূপ দিয়াছে। অনেক কুব্যাক্তিদের বিখ্যাত  হওয়া এবং বক্তব্য বা মতামত প্রদানের বিনিময়ে রুটিরুজির ব্যাবস্থা করে দেওয়াও তো প্রথম আলোর প্রকল্প। এছাড়াও……..

এবারও থামতে হলো করিম মিয়াকে। রহমান সাহের ঘামতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। এবার বললেন, দেশের উন্নয়নে প্রথম আলোর অবদানকে কি তুমি অস্বীকার করবা?

করিম মিয়া বলে উঠল, তওবা তওবা! এমন দু:সাহস এদেশের কারো নেই। উত্তর আধুনিকতা, নারীবাদ, সাম্য, সুবিচার, প্রগতিশীলতা, যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ এবং এজাতীয় আরো অনেক বিষয়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার  একমাত্র স্বত্ত্বাধিকারী হইতাছে প্রথম আলো। এসব বিষয়ের সঠিক, সময়পোযুগী প্রয়োগ এবং ব্যাখ্যা জাতীয় উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছে। এছাড়াও প্রয়োজন মাফিক সরকার পরিবর্তনে সেরা ভূমিকা প্রথম আলোর ছিল।

 রহমান সাহেব উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন, দেশের পাঠকপ্রিয়তায় প্রথম আলো শীর্ষে, জানো?

 করিম মিয়া নিচু কণ্ঠে বলল, সেইটাতো চাকচিক্য, ধোকাবাজিতা এবং হলুদ সাংবাদিকতা ফল। আরো আছে নকলের অভিনবত্ব।

 রহমান সাহেব চিৎকার করে বলে উঠলেন, প্রথম আলো আবার নকল করল কবে?

 করিম মিয়া ঠান্ডা স্বরে বলল, কেন বারাক ওবামার পবিরর্তনের শ্লোগান? সেটাকেইতো আরেকটু পরিবর্তন কইরা “বদলে যাও বদলে দাও” হইছে।

 রহমান সাহেব আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না। চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে সর্বোচ্চ জোড়ে চিৎকার করে একনাগারে বললেন, হ্যা, ঠিকই তো। তোকে বদলতে হবে, তোর মানসিকতা বদলাতে হবে, তোর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, তোর কথা-বার্তা বদলাতে হবে।

 করিম মিয়া যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে বলল, তার আগে প্রথম আলোকে বদলাতে হবে।

Leave a Reply