লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে কি না বা মালামাল যথাস্থানে রাখা হচ্ছে কি না- এসব তদারকির জন্য ঢাকা টার্মিনালে রয়েছে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট। এ মোবাইল কোর্টকে কাজ করতে দেখা যায় খুব কমই।
ঝড়-বৃষ্টির ছাড়াও সারাবছরই নৌ-দুর্ঘটনা যেন আমাদের নিয়তির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনার পর কিছুদিন সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়ে থাকে নিহতরা, হই-চই হয় কিছুদিন। তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু সে কমিটির রিপোর্টের বাস্তবায়ন কতোটুকু হয় কিংবা আসলেই তদন্ত হয় কি না তা অজানাই থেকে যায়। লঞ্চ বা অন্য কোনো নৌযান দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার পর এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয় কি না, হলেও তার ফলাফল কি হয় অথবা অপরাধীদের আদৌ শাস্তি হয় কি না- এসব প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত জনমানুষের অগোচরেই থেকে যায়।
লঞ্চ দুর্ঘটনা ও এর প্রতিকার এবং অভ্যন্তরীণ জলপথে নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে এর সার্ভে, রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আমাদের দেশের একমাত্র আইন হলো, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধ্যাদেশ, ১৯৭৬। আর এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ অনুসরণ করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলা পরিচালিত হয় মেরিন কোর্টে। আমাদের দেশে মেরিন কোর্টের সংখ্যা মাত্র একটি। সাধারণত দুর্ঘটনার পরেই সরকারের পক্ষ থেকে পাবলিক প্রসিকিউটর বাদী হয়ে মেরিন কোর্টে মামলা করেন। লঞ্চ মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা বা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে এ মামলা করা হয়।
এছাড়া দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করা হয়। মামলা শুরু হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাক্ষীরা হাজির থাকে না, ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। বিচারে অভিযুক্তদের অনেক ক্ষেত্রে কারাদ- দেয়া হলেও কার্যত দেখা যায় তারা পলাতক রয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে কি না বা মালামাল যথাস্থানে রাখা হচ্ছে কি না- এসব তদারকির জন্য ঢাকা টার্মিনালে রয়েছে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট। এ মোবাইল কোর্টকে কাজ করতে দেখা যায় খুব কমই। কোনো রকম অব্যবস্থাপনা থাকলে সে লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করার বিধান থাকলেও করা হয় না। ১৯৭৬ সালের আইনটি লঙ্ঘিত হলে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে নিহতদের পরিবার বা আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটে না।
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী উদ্যোগ এবং বারবার দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট জনসচেতনতার ফলে নৌ-আইনের কিছু কিছু ধারা প্রয়োগের মুখ দেখছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিষয় এখনো শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ঈদ কাছাকাছি চলে এসেছে। ঈদে ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার অন্যতম প্রধান বাহন নৌযান। আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাবে। লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধে এবং এর আইনগত প্রতিকারে সরকারি অবহেলা দূর করা আবশ্যক। সেসঙ্গে বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের সমন্বয় করাও জরুরি। সর্বোপরি যাত্রী-মালিক-কর্তৃপক্ষ সবার সচেতন অংশগ্রহণ এবং দায়িত্বশীল কাজ নৌ-দুর্ঘটনা রোধের কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।
Leave a Reply