বরিশালের লোকজন মেধাবী এবং ধুরন্ধর। খুব অল্প সময়ে আপনারে স্ক্যান করে ফেলতে পারবে। আর সুযোগ বা আপনার বিপদ বা অসহায়ত্ব বা জানাশোনার ঘাটতি টের পেলে গলা কেটে দিবে অথবা বাঁশ দিয়ে দিবে। শুনতে হয়তো খারাপ লাগছে, কিন্তু এটাই বাস্তব সত্য। এই ক্ষমতা বাংলাদেশের অনেক এলাকার লোকেরই আছে, তবে বরিশালের লোকেদের মত এত দ্রুত সবকিছু ক্যাচ করার সক্ষমতা তুলনা কম ।
ফজরের নামাজ পরেই বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে চলে এসেছি। মাহেন্দ্র/আলফা ভাড়া করতে হবে। যেতে হবে উজিরপুর উপজেলার সাতলার বিল। লাল শাপলা দেখবো। আগে থেকে খুব ভালো করে খোঁজ-খবর নিয়ে এসেছি, মাহেন্দ্র ভাড়া আপ ডাউন ১৫০০/- টাকা।
দরদাম করার সময় বউসহ গ্রুপের অন্য নারী সদস্যদের দূরে রেখে এসেছি। খাঁটি বরিশাইল্ল্যা ভাষায় কথাও শুরু করেছি। তাও রেহাই পাই নাই। কেমনে কেমনে যেন দুই-চার লাইন কথা বলার পরেই টের পেয়ে গেছে আমি পর্যটক। ব্যস, অমনি শুরু হয়ে গেছে গলা কাটার আয়োজন। একজন ড্রাইভার চাইলো ২৬০০ টাকা। আরেকজন বললো, ৩০০০ দিয়েন। আমার অনড় অবস্থান দেখে কিছুক্ষণ পর আরেকজন রাজি হয়ে গেলেন, কিন্তু আরেকজন এসে বাগড়া দিলেন, এইটা তার রুট, এইখানে অন্য কেউ যেতে পারবে না।
এইসব মহাফ্যাসাদ থেকে উদ্ধারের ভালো রাস্তা হলো ব্যাপক পার্ট নিয়ে ঝারি লওয়া, শেষ পর্যন্ত কাজ হলো। যাত্রা শুরু করলাম।
সাতলা গ্রামের অনেক বিলে লাল শাপলা দেখা যায়। কোথাও সাদা কোথাও লাল। আমরা শেরে বাংলা বাজার নামের ছোট একটা বাজারে নামলাম। বাজারের পাশের বিলের নাম সাতলা বিল। চারশ’ টাকায় ছোট নৌকা ভাড়া করে বিলের মাঝে হারিয়ে গেলাম। অনেক শাপলা। যতদূর চোখ যায় লাল শাপলার সমারোহ। শাপলাগুলো লাল হওয়ার কারণেই সৌন্দর্য আরো বেশি। নৌকা যত ছোট হবে, তত বেশি দূরে যাওয়া যাবে এবং তত বেশি সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
শাপলা ফুটে বছরের কয়েক মাস জুড়ে। বিলে যতদিন পানি থাকে শাপলাও থাকে। আমরা গেলাম আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। অনেক শাপলা পেয়েছি।
ফুটন্ত শাপলা দেখার মূল সময় হলো খুব সকাল বেলা, রোদ উঠার আগে। রোদ উঠে গেলে শাপলা বুজে যায়, আর রোদের তাপে বিলে ঘুরতে কষ্ট হয়। ফজরের পর থেকে রোদ উঠার আগ পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল সময়। কিন্তু এই গ্রামে রাত না কাটালে এত আগে সাতলায় পৌছানো মুশকিল।
আমরা ফজরের পর (৬টায় মাহেন্দ্রতে উঠেছি) বরিশাল থেকে রওয়ানা দিয়েছিলাম তাও পৌছাতে সকাল ৭:২০ বেজে গিয়েছিলো।
সাঁতার জানলে ভাল, না জানলেও সমস্যা নেই। বিলে পানি খুব বেশি না, তবে শাপলার গাছ পাতা এবং আরো নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ আছে, পরে গেলে পেচিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিলে সমবারের ভিত্তিতে মাছ চাষ হয়, এই এলাকায় প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়।
এই এলাকার লোকজন এখনও আমাদের দেশি পর্যটকদের অত্যাচার সম্পর্কে অবহিত না। এভাবে যতদিন থাকতে পারে তাই ভালো।
আর হ্যাঁ, সাতলা গ্রামটি ছবির চেয়েও সুন্দর।
Leave a Reply