আরজু ভাই ‘সময়’ নামে একটা ম্যাগাজিন বের করেছিলেন। সেইটার জন্য লিখেছিলাম। ছাপা হয় নাই। এখন বুঝতে পারছি এইটা লেখার জাত-পাত কিছুই হয় নাই।
রমজান মাস শেষের দিকে। ক্যাম্পাসও ছুটি হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। হলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই চলে গেছে আপন ঠিকানায়, মা-বাবার সান্নিধ্যে, পরিবারের কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পাল্টে যাওয়া রূঢ় বাস্তবতায় এখনও পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারেনি মাহমুদ। নিজের ইচ্ছা, অনিচ্ছা এবং প্রত্যাশাকে জেনে শুনেই সঁপে দিতে হয়েছে। সামষ্টিক স্বার্থের কাছে ছোট ছোট ব্যক্তিগত স্বপ্নগুলোর পরাজয় ঘটেছে, তবে মৃত্যু ঘটেনি।
নিজের বড়িতে ঈদ করার অনেক আনন্দের মধ্যে দু’টি বিষয়কে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয় মাহমুদের কাছে। প্রথমটি আত্মীয়-স্বজনের সাথে পূণঃমিলন আর দ্বিতীয়টি মায়ের সোহাগ। এবার ঈদে একটিও পাওয়া হচ্ছে না । আফসোস খুব একটা নেই তবে কষ্ট রয়ে গেছে।
আগামীকাল ঈদ । হলের প্রাণময়তা এখন নিস্তেজতায় রূপ নিয়েছে। প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস এখন নীরব। ঈদ উপলক্ষে সবাই আপনজনকে কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সদা জাগ্রত ক্যাম্পাস তার প্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঈদের সময় কাছে পাচ্ছে না –একারণেই হয়তো অভিমান করে আছে। মাহমুদের হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। অথচ বর্তমানে এই সংখ্যা শ’ এর কোটায়ও নেই, মাত্র কুড়ির কোটায় নেমে এসেছে। তাইতো হলসহ পুরো ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা ।
জীবনের অন্য সবকটি ঈদ থেকে মাহমুদের এবারের ঈদটি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে শুরু হলো। ছোটদের প্রাণচাঞ্চল্য আর কোলাহলের পরিবর্তে দিন শুরু হলো একাকিত্বে। গোসল করে নতুন জামা পড়লেও বড়দের সালাম আর ছোটদের সেলামি দেওয়ার অত্যাবশ্যকীয় কাজটাই আজ করা হলো না। হলে থেকে যাওয়া গুটিকয়েক ছাত্রদের রুমে গিয়ে মাহমুদ আনন্দ বিনিময় করলো। পরিচিত এই ছাত্রদের আজ খুব বেশি আপন, আন্তরিক লাগলো। এরপর দলবেধে সবাই ডাইনিং-এ মিষ্টান্ন খেতে গেল। মায়ের হাতে তৈরি মিষ্টান্নের চেয়ে স্বাদের ভিন্নতা থাকলেও তৃপ্তির কমতি ছিল না।
ঢাকাই ঈদের আসল রূপ দেখা গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে। পরিচিত-অপরিচিত শিক্ষার্থীরা, পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে একইসাথে একই ধরণের পোষাকে সম্পূর্ণ অকৃত্রিমভাবে দেখতে পেয়ে মাহমুদ অভিভূত। অবাক বিস্ময়ের সাথে সেই দলে হারিয়ে গেলো নিজেও। নামাজ শেষে বিশাল জনস্রোতের মাঝেও আন্তরিকতাপূর্ণ কোলাকুলির মাধ্যমে পরিপূর্ণ তৃপ্তির দেখা মিলল। শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে আতিথ্য গ্রহণের উন্মুক্ত সুযোগটিরও পুরো সদ্ব্যবহার করল।
ঢাকা নামের সবার জন্য খোলা শহরের ঈদের রূপটি সত্যিই মোহনীয়। অসংখ্য মানুষের ঠেসাঠেসি আর চিরচেনা লম্বা জ্যামের ঢাকা আজ বাস্তব আদর্শ নগরী। আজকের ঈদের দিনে পুরো নগরী ভারমুক্ত, উৎফুল্ল। ঈদের দিনের ঢাকা একশভাগ সময়ানুবর্তি। তাই বিভিন্ন জায়গায় ঢাকাই আত্মীয়দের সাথে ঈদের আনন্দ বিনিময়ে খুব বেশি সময় লাগলো না মাহমুদের। আবার প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসা—অপরাজেয় বাংলা, টিএসসি, কার্জন হল, শহীদ মিনার ,যেখানেই মাহমুদ গিয়েছে সবাই জোড় গলায় ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক জানিয়েছে। সেয়ানার মতো ক্যাম্পাসে ঈদের সবটুকু সুখ খুজে নিতে কার্পন্য করেনি মাহমুদ। তাইতো অন্যান্য ঈদেও চেয়ে শুধু ব্যতিক্রমি বলে নয় স্বপ্নীল ঈদ হিসেবেই ‘ক্যাম্পাসে ঈদ’ মাহমুদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকল।
Leave a Reply