সমগ্র বাংলাদেশ ।।  নয়জন

সমগ্র বাংলাদেশ ।। নয়জন

আমরা নয়জন তরুণ। ঠাকুরগাও-এর মুকুল মুস্তাফিজ, বাগেরহাটের সবুজ শেখ, পটুয়াখালীর জহিরুল ইসলাম মুসা, চাঁদপুুরের আব্দুল্লাহ আল আমান, পিরোজপুরের সাইদুর রহমান, সাতক্ষীরার খালিদ ইয়াহইয়া, বরিশালের ফয়জুল্লাহ ফয়েজ, নাটোরের আফজাল হোসেন ও বরগুনার তারিকুল ইসলাম। সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। নয়জন তরুণের দলের নাম হয়ে গেল ‘আমরা নয়জন’।

135308_1711073146970_4107810_o
আমরা ঠিক করলাম কয়েকটি পর্যায়ে মাতৃভূমির পুরোটা সফর করব। প্রতিটি জেলায়, গুরুত্বপূর্ণ-ঐতিহাসিক-আলোচিত-অবহেলিত সব জায়গায় যাব। আমাদের সবারই আছে টাকার সমস্যা, নানা প্রতিকূলতা ও পিছুটান। সবকিছুকে জয় করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটিতে শুরু হলো আমাদের সফরের প্রথম পর্যায়। এ সফর শুধু আনন্দ করার মধ্যেই আটকে ছিল না। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সুন্দরবনকে জয়ী করার লক্ষ্যে ভোট সংগ্রহ অভিযান চালিয়েছি খোদ সুন্দরবনে এবং সফরজুড়ে অন্যান্য স্থানে।
‘পথে-প্রান্তরে, সমুদ্রে-পাহাড়ে আর অরণ্যে—আমরা নয়জন’ এই স্লোগান নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু ১৪ ডিসেম্বর রাতে খুলনার উদ্দেশে। ১৫ ডিসেম্বর খুলনা শহর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শিপইয়ার্ড, রূপসা সেতু সফর শেষ করে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং হজরত খান জাহান আলীর (রহ.) মাজার দেখে রাত কাটালাম বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার এক প্রত্যন্ত বিদ্যুিবহীন গ্রামে, আরেক বন্ধু তারেকের বাড়িতে। গ্রামীণ চমত্কার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলাম সবাই।
১৬ জিসেম্বর বিজয় দিবসের পুরো দিনটি কাটল সুন্দরবনে। সেখানকার সাধারণ মানুষদের হাতে ধরে ভোট সংগ্রহ করেছি সুন্দরবনের পক্ষে। ‘কেন ভোট দেব? কী লাভ হবে?’ ইত্যাদি নানান প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে আমাদের।
এরপর বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাওয়ার পথে ঘন ঘন ফেরি পারাপার হওয়াটাকে আমরা আনন্দের উপকরণ হিসেবেই নিয়েছি। তবে চরমভাবে ভাঙা রাস্তা বিশেষ করে কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত চরম ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা আমাদের আনন্দকে মাঝে-মধ্যে থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কুয়াকাটায় সূর্যাস্ত, চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে রাতের বেলা সাগর তীরে নীরবে হেঁটে চলা সৌন্দর্যে আমরা সব ভুলে গেছি।
বরিশাল হয়ে লঞ্চে এলাম ঢাকায়। একদিন যাত্রাবিরতি। ২১ ডিসেম্বর আবার নেমে পড়লাম সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে সিলেট অঞ্চলের উদ্দেশে। এবার ট্রেনে। শ্রীমঙ্গল দেশের সবচেয়ে শীতল জায়গা। ট্রেন থেকে সেখানে নামলাম ভোর চারটায়, তখন কনকনে শীত। আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পৌঁছে গেলাম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। কমলগঞ্জ উপজেলায় মাধবপুরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটা শান্ত লেক আছে। অবাক করা সুন্দর।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। শীতকাল, তাই জলের গতি কম। কিন্তু সৌন্দর্যে অবাক হওয়ার মতো সবকিছুই বর্তমান। সেখান থেকে হাকালুকি হাওর।
জাফলং-এর কথা আলাদা করে বলতেই হয়। অনেক অনেক সুন্দর। স্বচ্ছ পানি। শাহজালালের (রহ.) মাজার আর শাবিপ্রবি’র ছিমছাম ক্যাম্পাসও বাদ পড়ল না। ক্যাম্পাসে বেশকিছু পুরনো বন্ধুর আতিথেয়তা পেলাম।
পুরো সফরে আমাদের জন্য বিশেষ কোনো যানবাহন ছিল না। বাস-লঞ্চ-ট্রলার-রিকশা-হিউম্যান হলার-মাইক্রো বাস-ভ্যান-ট্রেন-সিএনজি ট্যাক্সি-নৌকা বাদ পড়েনি কিছুই। আমরা নয়জনের পুরো দেশ সফরের সংকল্পের প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়টা বেশ ভালো কেটেছে। তৃতীয় পর্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি।

Leave a Reply