এক কিশোরের কান্না ভেজা একটি রাত। ২০০৬ সালের ৯ জুলাই। বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলছিল ফ্রান্স আর ইতালি। কিশোর বাড়ি থেকে ঢাকা আসছিল। লঞ্চে। নিচতলায় শুধুমাত্র একটা টিভিতে বিটিভি কানেক্ট করে খেলা দেখানো হচ্ছিল। অনেক ভিড় ঠেলেঠুলে টিভির খুব কাছে গিয়ে বসতে পারল সে।
৯০ মিনিট শেষে ১-১ গোল। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হলো। প্রিয় জিনেদিন জিদান মার্কো মাতোরোজ্জিকে ঢুস মারল। ১১০ মিনিটে লালকার্ড দেখলো। পুরো ঘটনা তখন বোঝায় সাধ্য ছিল না। ঝিরঝির করা টিভি পর্দা, অস্পষ্ট সাউন্ড, মানুষের চেচামেচি আর লঞ্চের শব্দ-এসবের মধ্যেই মাঠ থেকে বের হয়ে হারিয়ে গেল জিদান। কিশোরের চোখে তখনই পানি।
বিশ্বকাপটির পাশ ঘেঁসে হাতের ব্যান্ড ছুড়ে দিতে দিতে জিদান যখন বের হয়ে যাচ্ছিল, কিশোর তখন বুঝল ফ্রান্স আর কাপ জিততে পারবে না; খুব কাছ থেকেই জিদান সেটিকে ছেড়ে দিয়ে গেলেন। পুরো রাতে আর কিশোরের ঘুম হয় নাই। কান্নায়, কষ্টে।
আট বছর পরের এক মাঝরাত। রমজান মাস। সুন্দরবন-৯ লঞ্চের দোতলায় মাঝখানে পিঠাপিঠি দুইটা টিভি। দুই পাশে কয়েক শত মানুষের উৎসুখ চোখ। মাঝে-মধ্যে চিৎকার। হাততালি। আর্জেন্টিনা আর জার্মানি খেলছে। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। কাকতালীয়ভাবে আট বছর আগের কিশোর আমি আবারো লঞ্চে। বাড়ি থেকে ঢাকা আসছি।
চারিদিকে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার গিজগিজ করছে। খেলা দেখতে দেখতে শত শত মানুষের মধ্যে আমি সহ মোট ৫-৬ জন পাওয়া গেল যারা জার্মানিকে সাপোর্ট দিচ্ছে।
১১৩ মিনিটে গোল হলো। জার্মানি ১-০ গোলে জিতলো। সাথে সাথে টিভি বন্ধ হয়ে গেলো। ঘোষণা আসলো, সাহরী খাওয়ার আর মাত্র ১১ মিনিট বাকী আছে।
পুরস্কার বিরতনী আর দেখতে পারলাম না।
Leave a Reply