ফুফাতো বোনের বিয়েতে গিয়া দেখি আমার জেনারেশনের ‘বেইল’ নাই। কোকড়ানো চুলের কণিকা’র বিয়া হইছে কিনা সেটাও জানা হয় নাই।

ফুফাতো বোনের বিয়েতে গিয়া দেখি আমার জেনারেশনের ‘বেইল’ নাই। কোকড়ানো চুলের কণিকা’র বিয়া হইছে কিনা সেটাও জানা হয় নাই।

গ্রাম্য রাস্তায় সখিগণের সঙ্গে হেটে যাচ্ছে কণিকা।

বাড়ি গেলাম ফুফাতো বোনের বিয়েতে। আমার চেয়ে বয়সে বড় এমন ফুফাতো-খালাতো-মামাতো-চাচাতো বোনদের মধ্যে এটা সর্বশেষ বিয়ে। এরপর যেক’জন আছে তারা আমার চেয়ে ছোট। খুব করে মজা করার এটাই আমার জন্য সর্বশেষ সুযোগ ছিল। তাই পরীক্ষার দোহাই সত্ত্বেও তিনদিনের জন্য বাড়ি চলে গেলাম।

প্রত্যাশা একটু বেশি-ই ছিল। বরের জন্য গেট সাজাবো, বরের আসন সাজাবো, আরো কোন উপায় পেলে ‘আয়’ করব। আয় করা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করব। ছোট পোলাপাইনরে কম দিয়া নিজের ভাগে বেশি রাখব; আরো কত চিন্তা ছিল! গিয়া মোটামুটি হতাশ। আমার জেনারেশনের ‘বেইল’ নাই। ভাইগ্না-ভাগ্নিদের একটা জেরারেশন খাড়া হয়া গেছে, ক্ষমতা তাদের হাতে।

দুইটা ফুফাতো ভাই ছিল, তাদেরও ক্ষমতা-কর্তৃত্ব-মাতব্বরি নাই। কোনঠাসা সেই দলেরই একজন হয়ে গেলাম। গেট সাজানোর সুযোগ-ই পেলাম না। একটা ‘মুড’ নিয়া থাকার চেষ্টা করলাম।

ঠাট্টার সম্পর্কের অনেক আত্মীয়ারা এসেছে। ঠেস মারা নানা ধরণের কথা-বার্তা চলল। ভালই। গ্রামের মানুষগুলার এখনও রস-কস আছে। সমস্যা হল, মাঝারি থেকে উঠতি বড়লোকদের। এরা ঠিক বুঝতে পারছে না, কেমন ব্যবহার তাদের করা উচিত বা কেমন ভাব নেয়া উচিত। এদের কেউবা উপজেলা বা জেলা শহরে একটুকরা জায়গা কিনেছে, বা বাড়ি তুলেছে। পরনের কাপড়, কসমেটিস আর ছেলেমেয়ে ভাল স্কুলে পড়ে কিনা- এইগুলা তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু। এই টাইপের আত্মীয় স্বজনদের কথা-বার্তা, হাটা-চলা আমার কাছে কৃত্রিম কৃত্রিম ঠেকল।

গেটা সাজাতে না পারলেও, বর বাড়িতে ঢুকার সময় গেটে দাড়ানোর দায়িত্ব পেলাম। গোছালো এবং বাহারি ঢঙে পানের থালায় পান-সুপাড়ি, কয়েকটা মিষ্টি, এক জগ পানি আর একটা গ্লাস। গেটের মুখে একটু দরকষাকষি, শ্লোক ধরা বা কৌতুক করা- এসব কিছুই হল না। বড় দুলাভাইর সাথে আগেই সমঝোতা হয়েছে। টাকা কিন্তু আমার হাতেই দিল। গুনেও দেখতে পারলাম না কত টাকা, তার আগেই আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে! কোনো ভাগও পেলাম না।

ফুফতো বোনের যে একটা চাচাতো বোন ছিল, কণিকা। কোকড়ানো চুল। হাসলে গালে টোল পরে। এখন জেলা শহরে থাকে। অনেক বছর পর দেখলাম। বিয়ার লায়েক হয়েছে। আগ্রহভরে বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকাইল। কবে যেন একবার শুনছিলাম তার বিয়া হইছে। ‘কণিকার কি বিয়া হইছে’- একথা কারো কাছে জিগাইলামও না। কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম, পাই নাই। শেষপর্যন্ত কণিকার বৈবাহিক অবস্থা জানা হয় নাই।

লেখাটা ২০ মার্চ, ২০১১ ফেসবুক নোট হিসাবে লিখেছিলাম।

Leave a Reply